বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডাক্তার জোবায়দা রহমান দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তারেক রহমান হবেন বিএনপির চেয়ারপারসন। বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এমন সেটআপ নিয়েই আলোচনা চলছে দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মাঝে।
বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশে ফেরার বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে না পারা সংক্রান্ত ফেসবুকে দেওয়া তারেক রহমানের স্ট্যাটাসের পর থেকে দলটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে। এক্ষেত্রে অধিকাংশের অভিমত, বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে গেলে দল তীব্র চাপে পড়বে। চাপ সামাল দেওয়ার জন্য তারেক রহমানকে যথেষ্ট বলেই মনে করছেন তারা। তবে তারেক রহমানের যেহেতু আপাতত দেশে ফেরার সম্ভাবনা কম, সেক্ষেত্রে জুবাইদা রহমান কিংবা তার কন্যা জায়মা রহমানকেই ভাবা হচ্ছে উত্তম বিকল্প হিসেবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পরিচ্ছন্ন ইমেজের ডা. জুবাইদাকে নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। ফলে তার আগমনে রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা তৈরি করবে। আর রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও দেশে তার উপস্থিতিটাই জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষা ছুটি নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের চিকিৎসার জন্য মেয়ে জায়মা রহমানকে নিয়ে লন্ডনে যান জুবাইদা রহমান। এরপর একে একে ১৭টি বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, রাজনৈতিক চক্রান্তের কারণে জুবাইদা রহমান এতদিন দেশে ফিরতে পারেননি।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেমন ওয়ান-ইলেভেন ও আওয়ামী সরকারের চক্রান্ত ছিল, মামলা ছিল—তার সহধর্মিণীও এর বাইরে ছিলেন না। দুদকের এক মামলায় ২০২৩ সালে জুবাইদা রহমানকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। পরে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের ওই সাজা স্থগিত হয়। এরপর অবশেষে শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরছেন তিনি।
জুবাইদা রহমানের জন্ম বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। তিনি প্রয়াত রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মাহবুব আলী খানের মেয়ে। মাহবুব আলী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়েও তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।
জুবাইদা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি করেন। তিনি চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে ছুটি বাড়ানোর পরেও ফেরত এসে চাকরিতে যোগ না দেওয়ায় তাকে বরখাস্ত করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় বলে অভিযোগ বিএনপির।
জুবাইদা রহমান রাজনীতি সচেতন থাকলেও এখনো সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে স্বামী তারেক রহমানের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে গেছেন তিনি। এর বাইরে বিভিন্ন সময় বাবা মাহবুব আলীর মৃত্যুবার্ষিকী এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রামসহ দু-একটি সামাজিক প্রোগ্রামে তাকে দেখা গেছে। তিনি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ওভারসিজ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।
Editor & Publisher: Ziaul Hoq Mizan
Address : 3/2 Outer Circular Road (4th Floor), Rajarbag, Dhaka, Bangladesh
© All rights reserved by Daily Morning Herald - 2024-25