আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না মাহমুদুর রহমান মান্না। তার বিরুদ্ধে খেলাপি হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে । ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বগুড়া বড়গোলা শাখা আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের নামে খেলাপি ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা পরিশোধে ‘কল ব্যাক নোটিশ’ জারি করেছে। গতকাল বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখা প্রধান মো. তৌহিদ রেজা সিডিসিএস স্বাক্ষরিত এক নোটিশে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং তার অংশীদার জুলাই গণহত্যার ৯ টি মামলার পলাতক আসামী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবিএম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরীকে চূড়ান্ত সতর্কতা প্রদান করা হয়। নোটিশে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না হলে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
মান্নার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড়:
স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে অভিযোগ উঠেছে যে, যেই আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন সমালোচনা করে আসছেন মাহমুদুর রহমান মান্না, ঠিক সেই দলেরই এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে তিনি ব্যবসায় যুক্ত। যে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার জন্য ৯ টি মামলা বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ থানায় রয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, যে দলকে সারাদিন মান্না খারাপ বলেন সে দলের একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসীকে তিনি তার কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বানিয়ে রেখেছেন।
দু’জন মিলে লোনের টাকা আত্মসাতেরর অভিযোগ:
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আফাকু কোল্ড স্টোরেজ একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও মান্না ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধ করেননি। বারবার নোটিশ করা হলেও টাকা পরিশোধের কোনো চেষ্টাও করেননি মান্না।
ব্যাংকের নোটিশ অনুযায়ী, ২০১০ সালে ২২ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনুমোদন করা হলেও, মুনাফা, চার্জ ও জরিমানা পরিশোধ না করায় বর্তমানে বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ না হলে আইনি ব্যবস্থা ইসলামী ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর এর মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না হলে তারা আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে যে, প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের একটি বড় অংশ মান্না আওয়ামী লীগ নেতার সাথে মিলে আত্মসাৎ করেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের বিশেষ শাখার তথ্যমতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান চৌধুরী ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট আমেরিকায় পালিয়ে যান। অনেকের সন্দেহ, শাহজাহান চৌধুরীর মাধ্যমে আমেরিকায় এ টাকা পাচার করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না।
এদিকে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর ১৬ (ঠ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ঋণগ্রহিতা ঋণখেলাপী হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন। সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ঋণখেলাপী অবস্থায় মাহমুদুর রহমান মান্না আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ আছে এটা সঠিক। তবে চিঠির বিষয়ে তিনি এখনো কিছু জানেন না তিনি চিঠি পাননি। আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ব্যবসা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার এমডি আওয়ামী লীগ করে সেটা ঠিক আছে। কারণ কোম্পানিটা হয়েছে ১৫/১৬ বছর আগে। তখন তো আমিও আওয়ামী লীগ করতাম। এ কথা তো সঠিক যে, গত ১০ বছরে আমি এই কোম্পানির কাছে আমি যেতে পারিনাই। কারণ ওই ছেলে সব নিয়ন্ত্রণ করতো। আমাকে সাপোর্ট দেয়নি। কিন্তু টাকা পয়সা নিয়ে সব আমেরিকা পাঠিয়ে দিয়েছে। এটাও ঠিক যে সে আমেরিকা পালিয়ে গেছে।
মাহমুদুর রহমান মান্না প্রশ্ন রেখে বলেন, এই নিউজগুলো এখন করাচ্ছে ঠিক ভোটের আগে। এতোদিন না! তবে চিঠির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
Editor & Publisher: Ziaul Hoq Mizan
Address : 3/2 Outer Circular Road (4th Floor), Rajarbag, Dhaka, Bangladesh
© All rights reserved by Daily Morning Herald - 2024-25