যমুনা টিভির নিকোল আর ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবিরের মাঝে ঘটা ঘটনাটাতে বিএনপি কোনভাবেই রিলেভ্যান্ট ছিল না। বাট বিএনপির একটা অংশ শাহরিয়ার কবিরের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধীতা করার জন্যেই কোন কিছু না বুঝেই নিকোলের পক্ষ নিয়েছে।
অর্থাৎ জামায়াতের রাজনীতিকে প্রতিহত করার জন্যে তারা সেই মুজিবের পক্ষেই আছে যেই মুজিব ও তার আদর্শকে ৫ই আগস্টের গণআন্দোলনে এই দেশের দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষ দেশছাড়া করেছে।
আমার আজকের লেখা আমার খুবই কাছের কিছু জাতীয়তাবাদী মানুষের চিন্তা আর মতের বিপক্ষে যাবে। এতে কেউ মনে কষ্ট পেয়ে আমাকে সন্দেহ করে থাকলে এটি সম্পূর্ণ তাদের ব্যাক্তিগত বিষয়।
আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই ডাকসু নির্বাচনের সময়ে বিএনপির যুবদলের একজন নেতা আওয়ামী ন্যারেটিভে ভর করা স্লোগানে নানান মিছিল মিটিং করে মাঠ গরম করার চেষ্টা করেছিলেন। সে ভেবেছিল এই স্লোগান মিছিল ছাত্ররা গ্রহণ করবে আর ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলকে জয়ী করে আনবে।
আমি সেই সময়ে লিখেছিলাম, এর পরিণতি হীতে বিপরীত হবে। হয়েছেও তাই, কেবল ডাকসু না, নির্বাচন হওয়া সকল ছাত্র সংসদেই ছাত্রদল হেরেছে। প্রতিশ্রুতিশীল দুর্দান্ত কিছু উদীয়মান ছাত্রনেতা থাকার পরেও তারা ন্যাক্কারজনকভাবে হেরেছে।
জাতীয়তাবাদীরা এর নানান ব্যাখ্যা দাঁড় করালেও আমার কাছে তাদের একটি ব্যাখ্যাও পলিটিক্যালি গ্র্যান্টেড কোন যুক্তি নয়।
আসল পয়েন্টে আসি তাহলে। ৫ই আগস্টের পরে বিএনপি জামায়াতের যে রাজনৈতিক বিরোধ তা এক দিক দিয়ে প্রয়োজনীয় ছিল। এরূপ পরিস্থিতিতে দেশে এক্সিস্ট করা দলগুলোর রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাই কেবল পলাতক দলটিকে লাইম লাইট থেকে ভ্যানিস করে দিতে পারে।
কিন্তু বিএনপি এই পয়েন্টে এসে কেমন যেন জামায়াতের রাজনীতিকে তাদের নিজস্ব রাজনীতি দিয়ে প্রতিহত করতে পেরে উঠছিল না, বা সেই চেষ্টাই করেনি। বিএনপি দিশেহারা হয়েই আওয়ামী ন্যারেটিভে ভর করল।
দিশেহারা বলার কারন, আমার দৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত বিএনপি দলীয়ভাবে এমন কোন স্ট্রং রাজনীতি করতে পারেনি যা তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে সুসংহত করেছে। যাই হোক সেটা ভিন্ন আলোচনা।
দেখুন, শেখ হাসিনা গত ১৭ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুজিব পূজার লেবু কচলিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে দিনরাত গিলিয়েছে। এই দেশের তরুণ ও নতুন প্রজন্মকে সে যে মুক্তিযুদ্ধ খাইয়েছে পড়িয়েছে তা ছিল আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধ, সেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কোন প্রেজেন্স ছিলনা।
তাই তার প্রচার করা ন্যারেটিভে জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের চর, বিএনপির রাজনীতি চর্চা করা বীর মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন চরম অসম্মানিত নিপীড়িত।
৫ই আগস্টের পরে আওয়ামীলীগের কচলানো তিতা হয়ে যাওয়া সেই লেবুটাকেই বিএনপি তাদের অনুপস্থিতিতে কচলানোর দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছে।
যে লেবু অলরেডি তিতা হয়ে গিয়েছে বিএনপি সেই একই লেবু আরও বেশি করে কচলিয়ে শরবত করে মানুষ খাওয়াতে চেয়েছে। দেশব্যাপী ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের পরাজয়ই প্রমাণ করে বিএনপির সেই আওয়ামী লেবুর তেঁতো শরবত ছাত্ররা প্রত্যাখ্যান করেছে।
আমি তখন প্রতিবাদ করেছিলাম আজও এখনও করবো। কেন করেছি বা কেন করবো? কারন বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল যে দলকে বলা যায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দুঃসাহসি যোদ্ধাদের দল।
বিএনপি, সর্বপ্রথম বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেয়া সেনা কর্মকর্তা ‘মেজর’ জিয়ার দল, রণাঙ্গনে ভয়ংকর সব লড়াই করে রক্ত ঝরিয়ে দেশ স্বাধীন করা মেজর মীর শওকত আলী (পরবর্তীতে লেঃ জেঃ), ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দীন (পরবর্তীতে মেজর), সাদেক হোসেন খোকার মত বহু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দল।
আশ্চর্যজনকভাবে বিএনপি তার নিজের মুক্তিযোদ্ধাদের ধারণ না করে, তার নিজের মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভ প্রচার না করে, জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের আইকন হিসাবে উপস্থাপনের চেষ্টা না করে মুজিবের আওয়ামীলীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাওয়ার হয়েছে।
নিকোলের মত সাংবাদিকরা আওয়ামীলীগের রেখে যাওয়া সফট পাওয়ার। এরা ধীরে ধীরে মুজিবকে বাংলাদেশের সাথে রিলেভেন্ট করে পুনঃ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
এইভাবেই এরা অগ্নি দৃষ্টিতে একদিন বলে উঠবে, 'আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের দল, আপনি আমার শো তে এসে আওয়ামীলীগকে ফ্যাসিস্ট বলতে পারেন না'।
বিএনপি বুঝে হোক না বুঝে হোক নিকোলদের সেই প্রজেক্ট সাকসেসফুল করার রাস্তা গড়ে দিচ্ছে। শুধুমাত্র জামায়াতের রাজনীতিকে প্রতিহত করার রাজনীতি খুঁজে বের করতে না পারায় তারা আওয়ামীলীগের ভূতে ভর করে আবারও নিজেদের কবর খূঁড়ছে।
সেই কবরে নিজেরাতো ঢুকবেই, সাথে পুরো বাংলাদেশকেও ঢুকাবে।
লেখক : অনলাইন এক্টিভিস্ট ও ব্লগার (ফেসবুক পাতা থেকে নেয়া)
Editor & Publisher: Ziaul Hoq Mizan
Address : 3/2 Outer Circular Road (4th Floor), Rajarbag, Dhaka, Bangladesh
© All rights reserved by Daily Morning Herald - 2024-25